Golpo romantic golpo বি মাই লাভার

বি মাই লাভার পর্ব ৫+৬


#বি_মাই_লাভার

#পর্ব-৫

#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

খাবার টেবিলে নীরবতা, দিলশাদের কোনো অভিব্যক্তি নেই অথচ নির্জনার মুখে স্বস্তির অনুভূতি।নৈঋতা প্রত্যয়ের দিকে খানিকটা স্যুপ এগিয়ে দিয়ে বলল,

” কখন আসবে কাল?আজ কোনো ভাবে আসতে পারবে না?হোক রাত তবুও আজ হলে….

“এতো তাড়াতাড়ি কেন?”

“আমি কখনো তাকে কাছে পাইনি। যখন থেকে বুঝেছি মা বলতে কেউ থাকে তখন মামা বলতো সে আমার ডাবল মা।তাই এক মায়ের জন্য মন খারাপ না করতে।আচ্ছা তার নাম কি?”

“অমৃতা শাযলীন। আগামীকাল তুমি পাবে তার দেখা। এক অমৃতা তোমাদের তিন জনের সমস্যার সমাধান হিসেবে আসছে সে।”

নির্জনা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,’তুমি কোন তিন জনকে উদ্দেশ্য করছো?’

‘কেন?তোমরা?তোমার তো বরাবরই অভিযোগ ছিল এখানে নৈঋর থাকা নিয়ে। দিলশাদ নিজেও এখন নৈঋর দায়িত্ব নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আর এই মেয়েটার কি দোষ? যে তোমাদের মাঝে বার্গার হচ্ছে?”

দিলশাদের হাত খাবারের প্লেটে থেমে গেছে। পানির গ্লাসটা এগিয়ে নিয়ে সে বলল,

“কিড্ডো তোমার রুমে যাও।”

নৈঋতার পেটে তখনো ক্ষুধা কিন্তু দিলশাদ বলেছে মানে তাকে যেতেই হবে।অগ্যতা সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। একজন পরিচারিকা তাকে তার রুম অবধি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে প্রত্যয়ের ঠোঁটে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠেছে। সে দিলশাদকে বলল,

“এখনো তুই তোর মনেরটাই করলি।ওর পেটে এখনো ক্ষুধা ছিল। আর তুই বললি ও চলে গেল।”

“প্রত্যয় কি হচ্ছে এসব?”

“সত্যর মুখোমুখি হতে হবে তোদের দুজনের।নির্জনা, তুমি হুট করে এসেছো ওদের জীবনে।হুট করে এসে তুমি ওর সাথে যে ব্যবহার করছো কতোটা যুক্তিযুক্ত?”

“ও কোনো বাচ্চা মেয়ে না।”

“কিন্তু ও বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে এতোটাও জানে না।তোমার পাশে বসে থাকা মানুষটাকে জিজ্ঞেস করে দেখো সে কতোটা সীমিত করেছে ওর পৃথিবীকে।এই বাসার গার্ডরা অবধি তাকে চিনে না।কেন চিনে না?কারণ দিলশাদের গাড়ি ব্যতীত ও এই বাড়ির গেট অবধি যায়নি।স্কুল, কলেজে নিয়ে যাওয়া এমনকি ওর প্রতিটা বিষয় কেবল দিলশাদ নিজে দেখতো।নৈঋ ব্যাডমিন্টন পছন্দ করে, দিলশাদ ওর জন্য পুরো একটা ব্যাডমিন্টন ক্লাব নিজের বাড়িতে বানিয়ে দিলো। নৈঋ কৃষ্ণচূড়া পছন্দ, বাড়ির লনে ওর জন্য কৃষ্ণচূড়া গাছ আনা হলো।নৈঋ সমুদ্র পছন্দ, সমুদ্রের পাড়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভিলা তৈরী করলো। আজ হুট করে নৈঋ পারবে এই দিলশাদকে অন্যের সাথে ভাগ করে নিতে? ও তোমাকে মেনে নেয়নি? না করতে পারবে? ও তোমার সাথে সহজ হতে চায়নি? কিন্তু তুমি ভুল বুঝলে। যথেষ্ট চেষ্টা করছে তোমার সাথে কথা বলার।আর কেউ না দেখুক আমি দেখেছি।তোমার সাথে দিলশাদের বিয়ের কথা ঠিক হওয়ার পর ও সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল।আর তুমিই ওকে আঘাত করেছো।এটার অবশ্য দরকার ছিল।না হলে নৈঋ কখনো ওর পরিবারের কাছে ফিরতে চাইতো না।”

“তুমি সব দোষ আমায় দিচ্ছো প্রত্যয়?আর দিলশাদ তুমি কিছু বলবে না?এই মেয়েকে খোঁজার জন্য তুমি আমাদের বিয়েটা এভাবে নষ্ট করেছো?”

দিলশাদ নীরবে দুজনের কথা শুনছিল।প্রত্যয়ের বলা কথাগুলোর থেকেও সে আরো অনেক কিছুই করেছে নৈঋতার জন্য।যখন যখন নৈঋতার পরীক্ষা চলতো সে পুরো সময় অপেক্ষা করেছে বাইরে। বিগত আটটা বছরে এক মুহুর্তের জন্যও নৈঋতাকে নিজের চোখের সামনে থেকে দূরে রাখেনি। এমন নয় তার কাছে সুযোগ ছিল না অমৃতার সাথে যোগাযোগ করার।কিন্তু সে যোগাযোগ করেনি। নৈঋতাকে যখন সে প্রথম কোলে নিয়েছিল, মেয়েটার ছোট্ট আঙুল তাকে আঁকড়ে ধরেছিল শক্ত করে।অমৃতা নৈঋর মা।কিন্তু অমৃতা কি কখনও শুনেছে সেই কান্নার শব্দ, যখন একবার পেট ব্যথায় সারা রাত ধরে নৈঋ কেঁদেছিল?অমৃতা কি জানে, মেয়েটা টম অ্যান্ড জেরি দেখে কাঁদে, কারণ সে ভাবে জেরিকে কেউ ভালোবাসে না?দিলশাদের নীরবতায় যেন ঘরটা আরও ভারী হয়ে উঠেছে।প্রত্যয় গলায় তীক্ষ্ণতা এনে বললো,

“তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারছো তুমি কী করছো, নির্জনা?”

“আমি কী করছি, প্রত্যয়?তুমি তো এখন সেই মেয়েটার হয়ে আইনজীবীর মতো কথা বলছো। বাবা নেই, মা নেই, পরিবারের কেউ তার কথা বলে না।একটা উড়ে এসে জুড়ে বসা মেয়ে। দয়া করেই ওর জায়গা হয়েছে এই বাড়িতে।আর আমি? আমি কারো দয়ায় আসিনি।”

“নৈঋ কোনো দয়ায় নেই। সে এই বাড়ির।

তোমার যেমন দাবি, তেমনি ওরও আছে। এমনকি তার চেয়েও বেশি। কারণ তুমি এসেছো আজ দুদিন হয়নি। এই দেয়ালগুলোর মধ্যে ওর শ্বাস রয়েছে, ওর কান্না রয়েছে।”

“কান্না?”—নির্জনার কণ্ঠে উপহাস।

“ও কাঁদে তো? দেখেছো কখনও কিভাবে চোখ গরম করে তাকায়? কেমন করেই না আমার দিকে বিষ ছুঁড়ে দেয় দৃষ্টিতে!একটা বাচ্চা মেয়ে! কিন্ত তাতে শিশুসুলভ কিছু নেই। বরং ভয়ংকর একটা দখলবাজ মন—এই বাড়িতে, এই ঘরে, এমনকি দিলশাদের বুকেও নিজের একচেটিয়া দাবী রেখে দিয়েছে!”

“তুমি ওর সাথে প্রতিযোগিতা কেন করছো? তোমাদের সম্পর্ক প্রতিযোগিতার নয়।দিলশাদ কিছু বলছিস না কেন?না ভাই তোকে কিছু বলতে হবে না।আজকের দিনটা তো থাকতে দিবি?না দিলেও সমস্যা নেই আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।রাতটা সুহানার কাছে থাকবে না হয়, আগামীকাল চলে যাবে।”

প্রত্যয় উঠে দাঁড়াতেই দিলশাদ বলল,

“কিড্ডোর রুমে আমি অনুপস্থিত থাকা কালে কোনো পুরুষ এলাউ না প্রত্যয়।ওকে বিশ্রাম নিতে দে।”

নির্জনার দিকে তাকিয়ে দিলশাদ বলল,

“শী ইজ মাইন নির্জনা। ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।”

“তাহলে ওকে কেন বিয়ে করছো না দিলশাদ? যার পাশে অন্য কোনো পুরুষকে সহ্য হয় না, যার সামান্য আঘাতে তুমি ক্ষতবিক্ষত হচ্ছো৷ তাকে কেন বিয়ে করছো না।”

“আর ইউ ম্যাড? শি ইজ আ লিটল গার্ল। ইলহামের ভাগ্নি।”

“চোখ খুলে তাকাও দিলশাদ, তুমি বুঝবে কি করছো তুমি।”

নির্জনা চলে গেছে অনেকক্ষণ। প্রত্যয় তার আগেই রেগে বেরিয়ে গেছে।ড্রয়িং রুমে বসে দিলশাদ দীর্ঘ সময় নিয়ে তাকিয়ে রইল দেয়ালের দিকে। ডিজিটাল ফটোফ্রেমটায় আসছে একের পর এক নৈঋতার ছবি।

কখনো হাইস্কুলে উঠার পর প্রথম দিনের ছবি।যেদিন দুই বেনী করেছিল সে। আবার কখনো দিলশাদের কোলে ঘুমন্ত ছোট্ট নৈঋ, কপালে কৌটোভরা ঘামের রেখা।কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে ছবি আঁকা নৈঋ, সাদা জামা আর ক্যানভাসে লাল রঙ।সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে একা, ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা এক কিশোরী—যার পেছনে ঝাঁকড়া চুল বাতাসে উড়ছে।

দিলশাদের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠেছে। সে দুই হাতে নিজের চুলগুলো ঠিক করলো। সে মিথ্যে বলেনি।নির্জনাকে তার ভালো লাগে।যেটুক ভালো লাগে সেটুক ভালোলাগা দিয়ে সংসার করা যায়।কিন্তু নৈঋর বিনিময়ে কিছুই নয়।জীবনের আটটা বছর যে বাচ্চা মেয়েটাকে সে নিজের জীবনের সেরা সময়টা দিয়ে আগলে রেখেছে তাকে হুট করে কারোর কাছে তুলে দিয়ে নয়।সে নৈঋতাকে তুলে দিবে ঠিক তেমন ছেলের হাতে যেমন একটা রাজপুত্তুরের স্বপ্ন কিড্ডো দেখে তার স্বপ্নে।তার আগে অন্য কারোর কাছেই না।

নৈঋতা ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলো।নিজ হাতে এক মগ কফি বানিয়ে দিলশাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“হানিবিয়ার, ইউর কফি।”

“কত দিন পর ডাকলে এই নামে? কিড্ডো কখনো বলোনি কেন আমায় এই অদ্ভুত নামে ডাকো তুমি।”

নৈঋতা হাসলো।আট বছরে তো কখনো জিজ্ঞেস ও করেনি।আগামীকাল যেহেতু চলে যাচ্ছে তাই বলাই যায়।

” জানি না।তবে যখন যখন ভীষণ ভয় করে আমার, আমি আপনার পাশে এসে বসি।আপনার গা থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ আসে। আমায় ভয় দূর করে দেয়, আর যখন যখন কোনো বিপদ আসে আমার চারপাশে?আপনি কেমন আগলে নিয়েছেন প্রতিবার।তাই মনে হয় এই নামটা আপনার জন্য ছিল। আজকের এই সময়টাই তো আমাদের শেষ সময়। তাই না?”

“কেন?”

“নির্জনা সন্দেহ করে আমি আপনার এবং তার মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি।আপনিও কোথাও না কোথাও এটাই ভাবেন।আমার জন্য আপনাদের কোনো সমস্যা হোক আমি চাই না।”

“তাই পালিয়েছিলে?”

“দূরে সরে গিয়েছিলাম মাত্র।”

“কি ভেবেছিলে?খুঁজে পাবো না? তোমায় আমি জাহান্নাম থেকেও টেনে আনবো আমার কাছে।”

“আগামীকাল চলে যাচ্ছি আমি। এরপর আবার দেখা হোক বা না হোক আমায় ভুলে যাবেন তাই না?হুটহাট কল দিলে রিসিভ করবেন?”

দিলশাদ স্মিত হেসে নৈঋতার কাছাকাছি এসে ফিসফিস করে বলল,

“তোমায় চুরি করিনি, তোমায় কিনিওনি।তোমায় আমি গ্রাস করেছি। ইউ আর মাইন কিড্ডো। অনলি মাইন।”

চলবে………।

#বি_মাই_লাভার

#পর্ব-৬

#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

দিলশাদ আজ নিজ হাতে ব্রেকফাস্ট বানালো। নৈঋতা তৈরী হয়ে বের হবে।সাথে তেমন কিছু নেওয়ার নেই। ওর নানু এবং ইলহামের কিছু জিনিসপত্র আছে। দিলশাদের দেওয়া বাকী সব খুব সাবধানে বাক্স বন্দী করেছে পুরো রাত জেগে।সে চলে যাওয়ার পর নির্জনা এইগুলো হয়তো কোনো এতিম খানায় দিয়ে দিবে। সেসব নিয়ে বিন্দু মাত্র মাথা ব্যথা নেই নৈঋতার। একটা ব্যাগেই সব এটে গেল। সাথে নিয়েছে নিজের প্রিয় লিপস্টিক এবং পানির বোতল।ডেনিম জিন্স, কালো রঙের একটা ব্যাগি টিশার্ট পরে নেমে এলো। নাম মাত্র খাবার মুখে দিয়ে চাইলো দরজার দিকে।প্রত্যয়ের অপেক্ষা। অপর দিকে দিলশাদ ধীরে ধীরে নিজের খাবার শেষ করছে।নৈঋতা ধৈর্য্যহীনা হয়ে কল দিতেই দিলশাদ বলল,

“তোমায় এই বাড়িতে আমি নিয়ে এসেছিলাম কিড্ডো।আমি না যেতে দিলে তুমি যেতে পারবে?”

“আমি এখানে কেন থাকবো?আমার মায়ের কাছে যাবো না?”

“এই আট বছর তো রইলে।”

“সারা জীবন তো থাকতে পারবো না।তাছাড়া আন্টি চাইছে না আমি এখানে থাকি। আপনাদের প্রাইভেসির বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।”

“এটা তোমার কোনো আন্টির বাড়ি নয় কিড্ডো।এটা তোমার বাড়ি।”

“আমার মা চাই হানিবিয়ার। আই ওয়ান্ট আ ফ্যামিলি।”

“আই এম ইউর ফ্যামিলি মাই কিড্ডো।”

“আই ওয়ান্ট আ রিয়েল ফ্যামিলি।”

দিলশাদ উঠে দাঁড়ালো।যে সত্য থেকে মেয়েটাকে আঠারোটা বছর আড়াল করা হলো আজ তাকে সেই সত্যের মুখে দাঁড় করাতে হচ্ছে কেবল মাত্র প্রত্যয়ের বোকামির কারণে। ইলহাম বেঁচে থাকলে এই দিনটা আসতেই দিতো না।কিন্তু দিলশাদ পারছে না।

এয়ারপোর্টে প্রায় ঘন্টা দুই ধরে দাঁড়িয়ে আছে নৈঋতা।ভি আই পি লাউঞ্জে অপেক্ষায় নৈঋতার দৃষ্টি বাইরের দিকে। এই বুঝি এলো।তার খোলা চুলগুলো আলগোছে বাতাসে উড়ছে, কোথাও এনাউন্সমেন্ট হলেই সে আগ্রহ নিয়ে শুনছে কিন্তু একটা সময় এই আগ্রহটা পরিণত হলো এক অভিমানে। সময় পার হলেও কেউ এসে তাকে বুকে জড়িয়ে নেয়নি।দিলশাদ তার পাশেই বসে এক দৃষ্টিতে দেখছিল তাকে। চঞ্চল নৈঋতা অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে কাউচে হেলান দিয়ে।দিলশাদ এবার তার পাশাপাশি এসে বসলো।এটুক সম্পূর্ণ আজ তার সিকিউরিটি দল পর্যবেক্ষণ করছে। এই মুহুর্তে তাদের কেউ বিরক্ত করবে না। নৈঋতার ঘুম ভাঙলো প্রায় ঘন্টা খানেক পর কিন্তু তখনো নিজের মায়ের কোনো উপস্থিতি নেই।তবুও সে হাল ছাড়লো না।তবে দিলশাদ কে বলল,

“হানিবিয়ার ইউ ক্যান লিভ। আমি ম্যানেজ করে নিবো।”

“কোথায় যাবো আমি?তুমি ঘুমাও,তোমার যত সময় অপেক্ষা করতে ইচ্ছে হবে আমরা অপেক্ষা করবো।”

“মা আসবে তো?”

দিলশাদ কোনো জবাব দিতে পারলো না।সে বলতে পারলো না তাকে তার মা জন্মের তিন ঘন্টা পরেই ত্যাগ করেছিল।তার অন্য সহোদর নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিল বাইরের দেশে। কারণ তার সেই বাচ্চাটা ছিল পুরুষ সন্তান এবং প্রথম সন্তান।যখন মায়ের দুধের জন্য কাঁদছিল নৈঋতা কিংবা ডাক্তার বলেছিল এই বাচ্চাটার বাঁচার চান্স অনেক কম তখন ও এক বার ফিরে চায়নি সে। আজ সেই মা তাকে নিতে আসবে এটা কেবল অলীকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আট ঘন্টা পরেও যখন অমৃতা শাযলীনের দেখা মিললো না দুই হাতে মুখ ঢেকে বসে পড়লো নৈঋ। দিলশাদ তার মাথায় হাত রেখে বলল,

” সবার জন্য অপেক্ষা করতে নেই কিড্ডো।আমি তো আছি।বাড়ি ফিরবে?”

“না আমি আর ওখানে যাবো না।আমার হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করুন।”

“ব্যবস্থা অবধি চলো?”

“না তবুও না।মামার বাসায় থাকবো।”

দিলশাদ কিছুই বলল না। নৈঋ যা যা চাইছে তাতেই হ্যাঁ বলছে। সম্মতি জানাছে। এই মুহুর্তে যেন তাকে শান্ত করাটাই বেশি জরুরি। নৈঋর মন খানিকটা ভালো হতেই দিলশাদ বলল,

“আগামীকাল ঈদ। শপিং করবে?”

“উহু।”

“চলো কিড্ডো। লিপস্টিকের কিছু নিউ শেড নিবে।”

ব্যস এখানেই তো গলে যায় নৈঋতা। যখন যখন এই মেয়েটার মন খারাপ হয় তখন তখন দিলশাদ মন ভালো করার টনিক হিসেবে এটাই ব্যবহার করে।কান্নাকাটিকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে শো রুমে প্রবেশ করলো।গাঢ় সবুজ রঙের একটা থ্রি পিস নৈঋতার হাতে দিয়ে বলল,

“এটা কিড্ডো তোমার জন্য। চেঞ্জ করে এসো।”

পাশেই চলছিল মেহেদী ফিস্ট। দিলশাদদের বন্ধু মহলের সকলেই সেখানে উপস্থিত। নারীরা মেহেদী রাঙাতে ব্যস্ত আর পুরুষের তখন নিজেদের আড্ডায়।শপিং শেষ করে নৈঋতাকে সেখানে নিয়ে গেল দিলশাদ। দুই হাত ভর্তি মেহেদী দেওয়া শেষ হলে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলো,

“আপু কারোর নাম লিখবো?”

নৈঋতা দুই দিকে মাথা নাড়ালো।ঠিক সেই সময় একজন এসে তাকে জিজ্ঞেস করলো “তুমি কার সাথে এসেছো?মেম্বারশীপ কার নামে?”

“হানি… দিলশাদ মেহেবুব।”

“তুমি নৈঋতা? ইলহামের ভাগ্নি?”

নৈঋতা উপর নিচে মাথা নাড়তেই উক্ত ব্যক্তির পাশে থাকা নারীর চোখে মুখে বিষাদ ছেয়ে গেল।সে নৈঋতার পাশে বসে বলল,

“আমাকে একটু স্পর্শ করবে প্রাণপাখি? তোমার মামাটা আমায় একলা করলো।তার প্রাণপাখিকেও আমার ধরা ছোয়ার বাইরে রাখলো।করবে?”

তার হাত ধরার আগেই দিলশাদ কোথা থেকে এলো।ছোঁ মেরে নৈঋতাকে দাঁড় করিয়ে বলল,

“অপরিচিত কারোর সাথেই কথা বলা তোমার নিষেধ কিড্ডো।”

“কিন্তু….

এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে তাকে নিয়ে বের হয়ে এলো।পুরো রাস্তা মুখ ভার করে বসেছিলো নৈঋতা। দিলশাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রাইভারকে বলল,

” কৃষ্ণচূড়া টাওয়ারের বা দিকের গলি নিবেন।ওদিকটা গাড়ি থামাবেন।”

নৈঋতা তার দিকেও মনোযোগ দিলো না। কিন্তু একমুঠো কাঁচের চূড়ি তার হাতে পরিয়ে দিতেই খানিকটা অভিমান গলল তার। আর দিলশাদ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার হাতের মেহেদির এক পাশে লেখা দিলশাদ নামটার দিকে।

কি ছিল এই হাতের মেহেদী রেখায় থাকা নামে?নৈঋতা কেন তার নামটাই লেখালো?প্রশ্ন নিয়ে তাকালো মেয়েটার দিকে। কিন্তু প্রশ্ন না করে উল্টো বলল,

“মাই কিড্ডো, চাঁদরাতে মন খারাপ করে থাকাটা ভীষণ অন্যায়। তুমি কি চাইছো এই চাঁদ রাতেও আমি তোমার অভিমানের সাথে যুদ্ধ করি?”

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply