#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:৯ (প্রাপ্ত মনষ্কদের জন্য উন্মুক্ত)
#তানিশা সুলতানা
ওষ্ঠজোড়া বোধহয় ছিঁড়ে গেলো নুপুরের। প্রচন্ড যন্ত্রণায় ছটফট করে ওঠে। নওয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টায় ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়। এটাই বুঝি কাল হয়ে দাঁড়ালো তার জন্য। বেপরোয়া নওয়ান ওষ্ঠজোড়া ছেড়ে দেয় এবং তখুনি পাঁজা করে কোলে তুলে নেয়।
“হাডুডু খেলার শখ হয়েছে? ওকেহহহ
চল দেখি কতো তেজ আছে দুই ফুটের শরীরে
বলতে বলতে কক্ষের পানে পা বাড়ায়। নুপুর নওশানের শাটের কলার টেনে বলে ওঠে
” আমায় ছেড়ে দিন।
” নওয়ানের ডিকশিনারিতে ছাড়াছাড়ির কোনো চ্যাপ্টার নেই।
“আপনি ঠিক করছেন না মিস্টার বেয়াদব। একটা মেয়ের সঙ
বাকিটা শেষ করার আগেই তাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে নওয়ান। নরম গদির মতো খাট হওয়ায় ব্যাথা পায় না তবে ভয় পেয়েছে বেশ। মৃদু স্বরে চিৎকার করে ওঠে।
নওয়ানও এক লাফে নুপুরের কাছে চলে আসে। ওর ওপরে আধশোয়া হয়ে দুই হাত এক জায়গায় করে বিছানার সঙ্গে চেপে ধরে এক হাতে। নুপুরের হাত গুলো ছোট ছোট হওয়ায় এবং নওয়ানের হাত বড় হওয়ায় খুব সহজেই এটা করতে পারে। তারপর মুখের কাছে মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে
” নওয়ান তালুকদার যেটা করবে সেটাই ঠিক। হোয়াট আই ডু ইজ রাইট এভরিওয়ান এলস ইজ রং
আন্ডারস্ট্যান্ড?
নুপুর দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যায় তখনও নওয়ান ফু দেয় তার মুখে। সিগারেটের গন্ধ নাকে লাগে। নুপুর নাক কুঁচকায়। নওয়ান ফিসফিস করে বলে
“ইউ আর সো হট এন্ড সেক্সি।
অনেক মেয়ের সঙ্গে ইন্টিমেন্ট হয়েছি বাট এতোটা মজা পাই নি।
” আপনি পশুর থেকে
বাকিটা শেষ করার আগেই পূণরায় নুপুরের ওষ্ঠজোড়ার ভাজে নিজের ওষ্ঠ জোড়া মিলিত করে নওয়ান। এবার শুধু ওষ্ঠ জোড়ায় অত্যাচার চালাচ্ছে না। অবাধ্য হাত খানা কামিজের ফাঁকে ঢুকিয়ে দিয়েছে। বক্ষদেশে চাপ প্রয়োগ করায় অসহ্যনীয় প্রীড়ায় গুঙিয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। আঁখি পল্লবের কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু কণা। মনে হচ্ছে আনুর মতো তার জীবনটাও এখানেই শেষ। একটা পশুর কাছে পরাজয় নিশ্চিত।
দুই সেকেন্ডের জন্য চুম্বন বন্ধ করে নওয়ান বলে
“অশ্লীল আওয়াজ করবি না। খেয়ে ফেলবো এক্কেবারে।
কিছু মুহুর্ত বাদে নোনতা স্বাদ অনুভব করতেই দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে ফেলে নওয়ান। ওষ্ঠ ছেড়ে তাকায় নুপুরের মুখ পানে। দেখতে পায় ওষ্ঠ জোড়া ভীষণ বাজে ভাবে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে। র*ক্ত গড়াচ্ছে।
নওয়ান গালি দিয়ে বলে ওঠে
“ফা***** কি বালের লিপস তোর? এতো অল্পতেই কেটে গেলো?
নুপুর তাকাতে পারছে না। আর না পারছে কড়া স্বরে কিছু বলতে। শুধু শুনতে পাচ্ছে।
নওয়ান নুপুরের থেকে জবাব না পেয়ে প্লাজুতে হাত দিতে যায়। তখনই অনুভব করে নুপুর নিস্তেজ হয়ে আঁখি পল্লব বন্ধ করে দিয়েছে এবং শরীর ছেড়ে দিয়েছে।
বিরক্ত হয় নওয়ান।
বিরবির করে বলে
“ফা******
নারীর থেকে সিগারেট ভালো।।
_____
শ্বশুরবাড়িতে দ্বিতীয় দিনে রান্না করতে পাঠানো হয় নুপুরকে। আমিনা বেগম স্পষ্ট ভাষায় বলে দেয় আজকে থেকে কোন কাজের লোক থাকবে না বাড়িতে। সব কাজ নুপুর একা করবে। প্রতিবাদ না করে চুপচাপ আমিনার কথা মেনে নেয় নুপুর। সকালবেলা আলুর দম লুচি এবং খিচুরি রান্না করতে বলা হয় তাকে। সকাল সকাল আমিনা বেগম কক্ষে ঢুকে বলে গিয়েছে।
রান্না রান্না করতে জানেনা নুপুর। ও ভেবেছিলো আমিনা হয়ত হাতে হাতে সাহায্য করবে। কিন্তু না তাকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিয়ে আমিনা চলে গিয়েছে।
নুপুর নিজের মতো করে আলুর দম এবং লুচি বানিয়ে ফেলে। এবার চুলায় খিচুড়ি বসিয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে কি জন্য উপস্থিত হয় সবিতা। মজনু তালুকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী। দেখতে বেশ সুন্দরী। বয়স ৬৫ পেরিয়েছে তবুও রুপের যৌলস কমেনি। তিনি কিচেনে এসে কোন কথাবার্তা না বলে অপর চুলায় পানি গরম করতে থাকে। পানি যখন টগবগ করে ফুটছে তখনই চুলা বন্ধ করে এবং নুপুর কে আদেশের স্বরল বলে
“আমার গরম পানিটা গ্লাসে ঢেলে দাও।
নুপুর বলতে ইচ্ছে করে “পানি গরম করতে পারলেন আর ঠেলে খেতে পারবেন না? হাত কি পঙ্গু হয়েছে?” কিন্তু কিছুই না বলে একটা গ্লাস এনে পানিতে ঢালতে যায়। তখনই সবিতা পাতিলসহ পানিটা নুপুরের দুই হাতে ফেলে দেয়। যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে নুপুর। দু পা পিছিয়ে গলা কাটা মুরগির ন্যায় ছটফট করে কাঁদতে থাকে।
এমন দৃশ্য দেখে সবিতা বাঁকা হাসে ফিসফিস করে বলে
“তালুকদার বাড়িতে টিকতে পারবে না তুমি। আমি টিকতে দেবো না। সময় থাকতে লেজ গুটিয়ে পালাও।
আমার দাদুভাইয়ের সাথে নষ্টামি করার স্বপ্ন পূরণ হবে না।
কান্না ভেজা টলমলে চোখে সবিতার মুখপানে তাকায় নুপুর। তার মতো জেদি স্বরে জবাব দেয়
“নুপুর শিকদার পালাতে শিখিনি। বাঘের গুহায় ঢুকে বাঘের চোখ নিয়ে লুডু খেলার ক্ষমতা রাখি। এবার আপনিও দেখুন আমি কি করি।
” এই মেয়ে একদমই মুখে মুখে তর্ক করবি না।
তখনই বাড়ির সকলেই চলে আসে। সকলে বলতে স্নেহা, আমিনা, নীরা, নওয়ান এবং রাশেদুল। নায়েব তালুকদার রাতে ঢাকা চলে গিয়েছে। আজকে আজকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উপস্থিত থাকতে হবে তাকে। নওয়ান বোধহয় সবেই ঘুম থেকে উঠলো। শর্ট প্যান্ট, খালি গায়ে, এলোমেলো চুলে, ঠোঁটের ভাজা সিক্রেট গুজে কিচেনে ঢোকে।
চোখ মুখ কুঁচকে বলে
“এখানে কি নাটক হচ্ছে?
ততক্ষণে নুপুর নিজের হাত দুটো পেছনে লুকিয়ে ফেলেছে। নিজের দুর্বলতা অন্যকে দেখানো শুধু এবং শুধুমাত্র বোকামি মনে হয় তার। ব্যথা যার ঠিক করার দায়িত্বও তার। পৃথিবীতে কেউ কখনো কারো দুঃখ কমাতে সক্ষম হয়নি। বড়জোর একটু শান্তনা দিতে পারে।
সবিতা নওয়ানের দিকে এগিয়ে যায়। বলে
“এই মেয়েটাকে বলেছিলাম একটুখানি মরিচ ভর্তা বানিয়ে দিতে। কি নাটক করে চিৎকার করলো দেখ।
নীরা বলে ওঠে
“এই সাত সকালে আপনি মরিচ ভর্তা খাবেন?
রাশেদুল তালুকদার বলে
“তোমার কোনো সমস্যা? আমার মা মরিচ ভর্তা খাবে বানিয়ে দাও। ব্যাসস কোনো কথা নয়।
নওয়ান সিগারেটে দীর্ঘ টান দিয়ে বলে ওঠে
“হ্যাঁ আমিও মরিচ ভর্তা খাবো। চটপট বানিয়ে ফেলো।
বলেই সে চলে যায়। তার পিছন পিছন সবিতা আমিনা নীরা সবাই চলে যায় শুধু থেকে যায় স্নেহা। ছোট ছোট চোখ করে নুপুর কে দেখছে।
“হাত পেছনে রেখেছো কেনো?
স্নেহার প্রশ্নের জবাব দেয় না নুপুর। সে হাতে ওড়না পেঁচিয়ে খিচুড়ি নারতে থাকে। ইতোমধ্যেই হয়ে এসেছে। এবার শুধু চুলাটা বন্ধ করে একটুখানি রেখে দিলেই হয়ে যাবে।
স্নেহা এগিয়ে যায়। নুপুরের দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে ফেরার
“হাতে ব্যাথা পেয়েছো?
নুপুর মৃদু হেসে জবাব দেয়
“আমি যতদূর জানি তুমি মিস্টার বেয়াদবকে ভালোবাসো। সে আমায় নিয়ে আসলো। আমার সঙ্গে রাত কাটালো। হিংসে হচ্ছে না? আমার সাথে নরমাল বিহেভিয়ার করছো কি করে?
স্নেহা খেয়াল করে নুপুরের ঠোঁট দুটো জখম হয়ে আছে। বুঝে যায় রাতে নওয়ানের অত্যাচারেই এমন হয়েছে। আরও খেয়াল করে হাত দুটো টকটকে লাল রং ধারণ করেছে। সে চটজলদি ফ্রিজ থেকে ডিম এবং বরফ বের করে। প্রথমে একটা গামলায় বরফ গুলো ঢেলে হাত দুটো সেটার মধ্যে চুবিয়ে রাখে তারপর জবাব দেয়
“একটুও হিংসে হচ্ছে না।
আমি তাকে ভালোবাসি। পাওয়ার জন্য ভালোবাসিনি। সে যাতে ভালো থাকে। আমি যেনো তাকে ভালো রাখতে পারি সেজন্যই ভালোবেসেছি। আমি সব সময়ই বলি ” আমার থেকে যে তাকে বেশি ভালোবাসবে আমি নির্দিধায় তার কাছে হার মেনে নিবো। এবং নওয়ান এর পিছু ছেড়ে দিবো”
তুমি তাকে ভালোবাসো কি না জানি না। তবে তার চোখে তোমার জন্য মায়া দেখেছি আমি। সে তোমার সাথে ভালো থাকবে।
সে ভালো থাকলেও আমি খুশি।
আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।
নুপুর শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে স্নেহার মুখপানে। একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এতটা ভালো কি করে বাসতে পারে? আর এই এতো ভালোবাসা নওয়ানের চোখে কেনো পড়লো না?
“আমি তাকে পেয়ে গেলে আমার আর কোনো অপূর্ণ ইচ্ছে থাকতো না। সর্ব সুখে জীবনটা ভরে যেতো।
আফসোস কাকে বলে জানতেই পারতাম না। মাঝ রাতে চিৎকার করে কাঁদার মতো কোনো কারণ থাকতো না। তাকে পেয়ে গেলে গোধূলি বিকেলে ডুবে যাওয়া সূর্যের পানে তাকিয়ে আঁখি পল্লব ভিজে উঠতো না।
এক জীবনে আফসোস না থাকলে, দীর্ঘ শ্বাস না ফেলতে পারলে, চিৎকার করে কাঁদার মতো কারণ না থাকলে সব শেষে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো কষ্ট না পেলে জীবনের মূল্য বুঝতে পারবো কিভাবে?
সে নাহয় আমার দুঃখ হয়েই থাকুক।
আমি নাহয় একটা জীবন আফসোস নিয়েই কাটালাম।
চলবে
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব (২৪+২৫)
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৫
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৪
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১০
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২০
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৬+২৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১১