#অন্তরালে_আগুন
#পর্ব:৮
#তানিশা সুলতানা
স্নেহা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নওয়ানের মুখপানে। মনে মনে বলছে “আল্লাহ ও যেনো না বলে নুপুরকে সে বিয়ে করেছে। আল্লাহ আর যদি বলেও আমাকে সহ্য করার ক্ষমতা দিন। শক্তি দিন আল্লাহ। মানিয়ে নেওয়ার ধৈর্য দিন।”
বুকের ভেতরটাও অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। নিজের ভারসাম্য রাখতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ঠাস করে পড়ে যাবে। দু কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বেহায়া আঁখি পল্লবে অশ্রু জমেছে। প্রিয় মানুষের পাশে অন্য নারীকে সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে।
আমিনা বেগম স্নেহাকে কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। ফিসফিস করে বলে
“তুই ঠিক আছিস?
নেহা মাথা নাড়ায়। নওয়ানের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। অগোচরে লুকিয়ে ফেলে চোখের জল। এবং একটুখানি হাসার চেষ্টা করে। নীরা বেশ খুশি হয়েছে। বেশ আয়েশ করে কেকের টুকরো মুখে পুরে নেয় তিনি। হতাশ হয়েছেন রাজিব তালুকদার। বরাবরই তার ইচ্ছে ছিলো নওয়ানের সঙ্গে স্নেহার বিয়ে দিবে। এই বিশাল প্রসাদ তার মেয়ের হবে। কিন্তু এই ছেলে সব আশায় পানি ঢেলে দিলো।
নায়ের তালুকদার দু পা এগিয়ে আসে। বড়ই গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে
“এই মেয়ে এখানে কেনো আব্বা?
নওয়ান ইতিমধ্যেই নুপুরকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছেন। ৫ মিনিট হয়ে গেলো সিগারেট খেয়ে পারে নি। মনটা সিগারেটের জন্য আকুপাকু করছে। তাই অতি দ্রুত পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ঠোঁটের ভাজে গুঁজে নেয়। এবং লাইটারের সাহায্যে আগুন জ্বালায়। সিগারেটে দীর্ঘ টান দিতে দিতে সোফায় গিয়ে বসে। পায়ের উপর পা তুলে জবাব দেয়
“নির্বাচন পর্যন্ত এ এখানেই থাকবে।
ট্রিট হার লাইন এ মেইড।
নওয়ান তালুকদার বাঁকা হাসে। যাক বিয়ে টিয়ে করে নি। শুধু তুলে নিয়ে চলে এসেছে। নুপুর ভ্রু কুঁচকে তাকায় নওয়ানের মুখপানে। তাকে কাজের মেয়ের মতো ট্রিট করবে?
মজনু তালুকদার খুবই গর্বের সাথে বলে ওঠে
“এই না হলো আমার নাতি। সব দিকে তার খেয়াল আছে।
প্রশংসা শুনে মোটেও খুশি হলো না নওয়ান। বরং সে দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে বলে ওঠে
“সবাই জেগে আছো কেনো? আজকে কি?
স্নেহা এবার হাসে। মন থেকে হাসি পেয়েছে তার। প্রতিবছর ঠিক ১২ টায় সবাই উইশ করে তাকে। কিন্তু সবার উইশ সে চাইনা। সে শুধু নওয়ানের থেকে একটু উইশ চায়। অথচ কোনদিনও এই মানুষটা তার বার্থডে মনে রাখল না। কোনদিনও উইশ করল না।
আমিনা বলতে চায় তারা কেনো জেগে আছে। স্নেহা তাকে থামায় এবং বলে
“কিছু না আজকে। ফালতু একটা দিন।
তারপর নুপুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়
“আমি জানি না তুমি এখানে কেনো এসেছো। বা তোমাকে কেনো এনেছে। কিন্তু তুমি যে মেইড না এটা আমি জানি।
চলো আমার সাথে। আজকের রাতটা আমার কাছে ঘুমাও।
সঙ্গে সঙ্গে নওয়ান ধমকের স্বরে বলে ওঠে
“পাকনামি করতে শিখে গেছিস?একটা থাপ্পড় দিয়ে পাকনামি ছুটিয়ে দেব।
ভয় পেলো স্নেহা। যেভাবে এগিয়ে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই পিছিয়ে যায়। রাজিব তালুকদার বলে ওঠে
“আব্বা এভাবে একটা মেয়েকে নিয়ে
নওয়ান হাত উঁচু করে রাজিবকে থামিয়ে দেয়
” নওয়ান তালুকদার কখনো ভুল করে না। ওকে নিয়ে এসেছি মানে এটাই ঠিক।
এজ এ ক্লিয়ার?
রাজিব মাথা নারায়।
মীরা জিজ্ঞেস করে
“তুমি কি ওকে বিয়ে করেছো?
স্নেহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। মনে মনে বলে “নাহহ বলুন নওয়ান। প্লিজজ না বলুন। আপনি বিয়ে করতে পারেন না।”
আমিনা বুঝতে পারে তার ছেলে জবাব দেবে। আট এটাও বুঝতে পারে “বিয়ে করেছে”
তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে ওঠে
“আব্বা রুমে যাও। তোমার রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন।
নওয়ান মাথা নারিয়ে নুপুরের হাত মুঠো করে ধরে টেনে নিজ কক্ষে নিয়ে যায়। স্নেহা তাকিয়ে থাকে। ওপরটা শান্ত কিন্তু ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কেউ যেনো ধারালো ছুরি দিয়ে বারংবার আঘাত করছে কলিজায়।
” ভালোবাসা মন্দ নয়৷ তবে পাওয়ার আক্ষেপ, হারানোর ভয় এবং না পাওয়ার যন্ত্রণা ভীষণ খারাপ। ভালোবাসলে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে হবে। থাকবে না কোনো পাওয়ার আশা কিংবা হারানোর ভয়।”
স্নেহা চিৎকার করে কাঁদতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। এক দৌড়ে নিজের কক্ষে চলে যায়। ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে ঠোঁট কামড়ে কেঁদে ওঠে।
“আর কিভাবে ভালোবাসলে আপনাকে পাওয়া যেতো নওয়ান? আর কিভাবে আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি আপনাকে আমার করে দিতো?
আমি তো চেষ্টার কোনো কমতি রাখি নি। তাহলে কেনো পেলাম না আপনাকে?
আমার প্রতি একটু দয়া করা গেলো না?
আরেহহ একটা কুকুর যদি দুই দিন পেছনে ঘোরে তবুও তো তার প্রতি মায়া জন্মায়। অথচ আমি এতোগুলো বছর কুকুরের মতো পেছনে ছুটলাম তবুও একটু মায়া জন্মালো না? তবে আমিই এই পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট প্রাণী?
দুই হাতে নিজের চুল খামচে ধরে স্নেহা। ইচ্ছে মতো থাপ্পড় দিতে থাকে নিজের গালে। পাগলের মতো বিলাপ বকতে থাকে
” আল্লাহ জানটা নিয়ে নিন। আমি কিভাবে সহ্য করবো? আমি মানতে পারবো না। দেখতে পারবো না। আল্লাহ আমায় মুক্তি দিন। দয়া করুন আল্লাহ।
__
কক্ষ প্রবেশ করতেই নুপুরের হাত ছেড়ে দেয় নওয়ান। জুতো পায়ে রেখেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে নুপুর।
“বেয়াদব একটা”
বিরবির করে আওড়িয়ে বেলকনিতে চলে যায়। মানতেই হবে বড়লোকদের বড় বড় কারবার। নওয়ানের কক্ষের বেলকনিটা ভীষণ সুন্দর। এক পাশে ছোট্ট সুন্দর দোলনা এবং অপর পাশে বিভিন্ন বিদেশি ফুলের গাছ।
বেলকনি থেকে বেওথা ব্রিজটা স্পষ্ট দেখা যায়। জোছনা রাত। আসমানে থালার মতো চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোতে ছলমল করছে বেওথা নদীর পানি।
নুপুরের বিগড়ে যাওয়া মেজাজ শান্ত হয়ে যায়।
ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি।
তখনই কক্ষ থেকে সুন্দর কন্ঠস্বর ভেসে আসে
“তুমি দেখছো তাকে
ভাবছো যাকে
সে আসলে মানুষ নয়
সে বেঁচে আছে এক পৃথিবীর এক কোণে
সে মৃত মানুষের চিৎকার শোনে
নুপুর মুগ্ধ হয়। বিরবির করে বলে
” বেয়াদবটা নেতাগিরি বাদ দিয়ে গান করলেও তো ভালো নাম কামাতে পারে।
“নাম দিয়ে কি করবো? আমার দরকার ক্ষমতা
চমকায় নুপুর। এই মুহুর্তে বেয়াদবটাকে বেলকনিতে আশা করে নি।
নওয়ান নুপুরের পেছনে এসে দাঁড়ায়। ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস টেনে ঘ্রাণ শুকে। নুপুর ছিঁটকে দু পা সরে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে আঙুল তুলে বলে
” আমাকে টাচ করার চেষ্টাও করবেন না মিস্টার বেয়াদব।
নওয়ান বাঁকা হাসে এবং তখুনি নুপুরের কোমর জড়িয়ে ধরে।
ঠোঁটের ভাজে থাকা সিগারেটে দীর্ঘ টান দিয়ে নুপুরের মুখের ধোঁয়া ওড়ায়। নুপুর কেশে ওঠে।
“তোর মতো বালকে টাচ করার ইন্টারেস্ট নেই আমার।
বাট বাট বাট তুই যখন বললি চেষ্টাও করবেন তো তো একটু টেস্ট করতেই হবে।
বলতে বলতে নুপুরের মুখের দিকে নিজের মুখ খানা এগিয়ে নিতে থাকে।
হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে নুপুরের দুই গালে হাত রাখে। এবং ওষ্ঠজোড়া দখল করে নেয়।
চলবে
Share On:
TAGS: অন্তরালে আগুন, তানিশা সুলতানা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৮
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১১
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৫(৫.১+৫.২)
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ৯
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২৬+২৭
-
অন্তরালে আগুন পর্ব (২৪+২৫)
-
অন্তরালে আগুন গল্পের লিংক
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৪
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ১৬
-
অন্তরালে আগুন পর্ব ২২