Golpo romantic golpo অন্তরালে আগুন

অন্তরালে আগুন পর্ব ৫(৫.১+৫.২)


#অন্তরালে_আগুন

#পর্ব:৫.১

#তানিশা সুলতানা

“বিয়ে করবো তোকে।

নুপুরের পা জোড়া থেমে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় নওয়ান এর মুখ পানে।

ইতিমধ্যেই নেতা সাহেব এর বডিগার্ডরা হাজির হয়েছে। দৌড়ে এসেছে বোধহয় সকলেই। বল্টু হাঁপাতে হাঁপাতে এক খানা সিগারেট নওয়ান এর সামনে ধরে।

নুপুর ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে। তারপর দু পা এগিয়ে নওয়ান এর মুখোমুখি দাঁড়ায়।

” সময় নাই। চল কাজি অফিস। এখুনি বিয়ে করবো। এই বল্টু ফুল টুল যা লাগে নিয়ে আয়।

বল্টুর হাতে থাকা জলন্ত সিগারেট খানা নিজের হাতে নিয়ে নেয় নুপুর৷ সেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে জবাব দেয়

” বিয়ে? তাও একটা জানোয়ারকে? নিজের থোবড়া খানা আয়নায় দেখেছেন?

বল্টু সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদের স্বরে বলে ওঠে

“আপা আমার ভাই চান্দের নাগাল সুন্দার। তার দিকে তাকাইলে খালি দেখবার মন চায়।

“কিন্তু আমার যে ওনার মুখ দেখলে বমি পায়। ডাস্টবিনের কিট মনে হয়।

নওয়ান নিজের হাত খানা এগোয় নুপুরকে ছুঁবে বলে। নুপুর সেই হাত খানা ধরে জলন্ত সিগারেট হাতের মধ্যে ঠেসে ধরে। বল্টু সহ বাকিরা এগোতে নেয়। নওয়ান হাতের ইশারায় তাদের এগোতে না করে।

” সাবধান মিস্টার বেয়াদব। আগুনে হাত বাড়াতে নেই। জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যাবেন।

নওয়ান দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে নুপুরের মুখ পানে তাকিয়ে থাকে।

নুপুর ছেড়ে দেয় বেয়াদবটার হাত। এবং বড়বড় পা ফেলে প্রস্থান করে।

নুপুর চোখের আড়াল হতেই নিজের হাতের পানে তাকায় নওয়ান। লাল হয়ে গিয়েছে জায়গাটা।

বল্টু চট জলদি নিজের শার্ট খানা খুলে পুকুর থেকে ভিজিয়ে আনে। এবং নওয়ানের ক্ষত স্থানে ভেজা শার্ট চেপে ধরে।

“ভাই আপারে কিছু কইলেন না কেন? হেয় আপনারে আঘাত করলো।

নওয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।

” এই বল্টু সিগারেট দে।

বল্টু হাত ছেড়ে তাড়াহুড়ো করে সিগারেট বের করে। নওয়ান এর ঠোঁটের ভাজে সিগারেট গুঁজে দিয়ে লাইটারের সাহায্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

সিগারেটে টান দিয়ে নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ওড়ায় নওয়ান।

“শালী সোজা ভাষা বুঝবে না।

তামিম ও যেভাষায় বুঝবে ওরে সেই ভাষাতেই বোঝা।

তামিম নামের ছেলেটা মাথা নেরে সম্মতি প্রকাশ করে। এবং তখুনি পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা করতে থাকে।

নওয়ান বাইকের ওপর শুয়ে পড়ে। ঠোঁট ভাজে সিগারেট এখনো রয়েছে।

আসমান পানে তাকিয়ে বিরবির করে আওড়ায়

“অন্তরালে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিস বেবি। এবার দেখবি আগুনের তাপ কতো ভয়ংকর হয়৷

___

মেজাজ বিগড়ে আছে নায়ের তালুকদারের। ভরা সমাবেশে অপমান করা হয়েছে তাকে। দু টাকার একটা চেয়ারম্যানের এতো সাহস হয় কিভাবে? আর কিভাবে বা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করলো?

তালুকদার মহলের সকলের মুখটা থাম থম হয়ে আছে। বর্তমানে রানিং প্রধানমন্ত্রী আলতাফ মুজাম্মেল এই নিউজ খানা দেখে ফেলেছেন। এবং তিনিও এক বাক্যে বলে উঠছেন “যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ। সে কিভাবে প্রধানমন্ত্রী আসনে বসা স্বপ্ন দেখে? প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তার নিজেকে পরিবর্তন করা প্রয়োজন”

আমিনা বেগম এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নায়েব তালুকদারের পাশে। মানুষটা সোফার হাতলে মাথা থেকে চোখ বন্ধ করে আছেন। মজনু তালুকদার তার সামনা সামনি সোফায় বসে আছেন। তিনিও বেশ চিন্তিত। নির্বাচনের আগে এমন একটা নিউজ শত শত ভোট কেটে দিবে। যেখানে ১০০% জেতার সম্ভাবনা ছিলো সেখানে ১০% আশাও করতে পারছে না।

স্নেহা নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। সে নিজেও নিউজ খানা দেখেছে।

চাচার উদ্দেশ্যে স্নেহা বলে ওঠে

“চাচ্চু এই পরিস্থিতির একটাই সমাধান। আপনি কথা বলুন চেয়ারম্যানের সঙ্গে। প্রয়োজনে তাকে ভয় দেখান। আর সাংবাদিকদের সামনে বলতে বাধ্য করুন বিপক্ষ দলে থেকে টাকা নিয়ে সে এমন মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছে। এবং বিপক্ষ দল টাকার পাওয়ারে মিথ্যে কেস সাজিয়েছে। ব্যসস ভোট এবং জনগণ দুটোই আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

নায়েব তালুকদার চোখ খুলে তাকায় স্নেহার মুখ পানে। এতোদিন স্নেহাকে সব থেকে বোকা এবং অবুঝ মনে হয়েছে। কিন্তু এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে এই তালুকদার বাড়িতে নায়েব তালুকদারের পরে যদি কেউ রাজনীতি বুঝে থাকে সেটা হচ্ছে স্নেহা।

মজনু তালুকদার বলে ওঠে

” আমার বোনু দেখছি বড় হয়ে গিয়েছে। রাজনীতি বুঝতে শিখে গেছে।

স্নেহা হাসে। আমিনার হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে নায়েবে তালুকদারের পাশে গিয়ে বসে। তার হাতে গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে আমিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে

“মেঝো আম্মু যাও খাবার রেডি করো।

আমিনা মাথা নারিয়ে চলে যায়। নায়েব তালুকদার পানি খেয়ে বলে ওঠে

” স্নেহা বেডা ইউ আর গ্রেট

প্রতিত্তোরে স্নেহা একটু হাসে।

___

নুপুরের আজকে খুশির শেষ নেই। কেনোনা তার ভাই নেহাল বাড়ি আসছে ঢাকায় থেকে। পড়ালেখা করার সুবিধার্থে খুব বেশি বাসায় যাতায়াত নিয়ে তার। ওই বছরে দু-তিনবার আসা হয়। এক্সাম শেষ। টিউশনি থেকে ছুটি নিয়েছে সব মিলিয়ে বর্তমানে ফ্রী সময় পার করছে। সেজন্যই বাসা থেকে ঘুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড ভীষণ সাজানো গোছানো এবং পরিষ্কার। খুব বেশি ভিড় বা যানজট লেগে থাকে না। বড় বড় দু খানা রাস্তা যথেষ্ট গাড়ি চলাচলের জন্য। এখানকার ট্রাফিক পুলিশও বেশ কড়া।

মেইন রোডের বাম পাশে বিশাল বড় পৌরসুপার মার্কেট। তার পাশে বিভিন্ন ফলের দোকান। সে দোকানগুলোর সামনে অটো দাঁড়িয়ে আছে সিরিয়াল দিয়ে বেওথা কিংবা টাউনে যাওয়ার জন্য। অটোওয়ালাদেরও তেমন তাড়াহুড়ো নেই। যাত্রী ভরে গেলে রিলাক্স এ চলে যায়।

রাস্তার অপর পাশে সদর হাসপাতাল সহ বেশ কিছু হাসপাতাল। ডাক্তারের ফার্মেসী মিষ্টির দোকানসহ টুকিটাকি আরো কিছু দোকান রয়েছে। বলা বাহুল্য দুপাশে সকল দোকানের মালিক নায়েব তালুকদার। বিট্রিশ আমলে মজনু তালুকদার এর বাবা এই সমস্ত জমি কিনেছিলেন। কালে কালে এই জমির ওপর রাস্তা হাসপাতাল এবং শপিং মল গড়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যে দোকান ভাড়া কিংবা চাঁদাবাজির জন্য একটুখানি ভিড়ভাট্টা দেখা যায় মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে।

তবে আজকে রাস্তাঘাট পরিষ্কার। গাড়ি টাড়িট তেমন ভিড়ভাট্টা নেই। নুপুর মেইন রোডের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা থেকে বাস এসে এখানে এসেই থামবে। ইতোমধ্যে এসে পড়েছে ও বোধয়। ওই তো খানিকটা দূরে নীলাচল বাস দেখা যাচ্ছে। নেহাল বলেছিল সে নিলাচলেই আসছে।

আজকে সূর্যের তাপমাত্রা একটু বেশি কড়া। একটানা ৪-৫ দিন বৃষ্টির পরে রোদের দেখা মিলেছে। সেজন্যই বোধহয় একটু বেশি তাপ দিচ্ছে। নুপুরের ফর্সা মুখশ্রী ঘেমে নেই একাকার। গরমে হাঁসফাঁস লাগছে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। ব্যাগে ছাতা রয়েছে তবে সেটা বের করতে ইচ্ছে করছে না। ছাতা ফুটিয়ে আবার ধরে রাখতে হবে। সেটা একটা অলসতা।

হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ একজন বলে ওঠে

“ওই দেখ নওয়ান রিশাদ মুরসালিন এর বেবি গার্ল।

নুপুর কপাল কুঁচকে পিছন ফিরে তাকায়। তবে ঠিক কে কথাটা বলল ধরতে পারেনা। অনেকগুলো ছেলে বসে আছি ওভারব্রিজের উপরে। তাদের জন্য সাধারণ জনগণের যাতায়াত কষ্ট হচ্ছে। নুপুরের ইচ্ছে করে সবগুলো ছেলেকে জুতোপেটা করে সেখান থেকে নামাতে তবে অনেকদিন পর ভাই আসছে বলে ঝামেলায় জড়ালো না।

সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সামনে তাকাতে পুনরায় আবারো শুনতে পায়

“শুনলাম তোমার বাবা না কি টাকার জন্য তোমাকে নওয়ানের বেডে পাঠায়?

পাবলিক প্লেসে কথাটা একটু বেশি দৃষ্টিকটুর লাগলো। নুপুর পিছন দিক ঘুরে সবগুলো ছেলের মুখ পানে নজর বুলায়। বাইকের ওপরে বসা ছেলেটা মনে হচ্ছে কথাটা বললো।

নুপুরকে এভাবে তাকাতে দেখে ছেলেটা একটু ভয় পাওয়ার স্বরে বলে ওঠে

“আমাদের দিকে এভাবে তাকানোর কি আছে? নওয়ান ভাই বলেছে তুমি নাকি সেই হট। একদিন আমাদেরও টেস্ট করতে দেবে।

কিরে বল তোরা।

বাকি ছেলেগুলো মাথা নারিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে।

থর থর করে কেঁপে ওঠে নুপুরের হাত পা। রাগ কন্ট্রোল করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

ইতোমধ্যে বাস থেমে নেমে পড়েছে নিহাল। কাঁধে ব্যাসস এবং হাতে মিষ্টির প্যাকেট। নুপুর যে মিষ্টি খেতে প্রচুর ভালোবাসে। নুপুর কে দেখতে পেয়ে এক গাল হেসে দুহাত বাড়িয়ে দেয় নিহাল।

নুপুরে কোন দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিহালকে জড়িয়ে ধরে। বুকে মাথা রেখে আহ্লাদী স্বরে বলে

” এতোদিনে মনে পড়লো আমার কথা?

নিহাল নুপুরের মাথায় চুমু খায়।

“সব সময়ই মনে পড়ে।

দুই ভাইবোন কথা বলতে বলতে এগোতে থাকে পৌরসুপার মার্কেট এর দিকে।

রাস্তা ক্রস করার সময় হঠাৎ কালো রংয়ের প্রাইভেট এসে থামে ওদের সামনে৷

চলবে

#অন্তরালে_আগুন

#পর্ব:৫.২

#তানিশা_সুলতানা

গাড়ি থেকে নেমে আসে নওয়ান। কালো রংয়ের টিশার্ট তার ওপরে সাদা শার্ট। ছেঁড়া ছেঁড়া জিন্স আর পায়ে কালো জুতো। চোখে রোদ চশমা আর ঠোঁটের ভাজে সিগারেট। লম্বা চুল গুলো এলোমেলো। এই ছেলের ড্রেসআপ একদম আলাদা। ব্যান্ড ছাড়া পোশাক নেই বোধহয় তার।

নওয়ান রিশাদ মুসতালিন এর গাড়ি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে থামতেই অটো রিকশা সহ বাস থেমে যায়। ভিড় বাড়তে থাকে সেখানে। নুপুর ভ্রু কুঁচকায়। এই বেয়াদব আবার সিনক্রিয়েট করবে না কি?

নেহাল নুপুরের হাত ধরে নওয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে

“এনি প্রবলেম ভাই? কিছু বলবেন?

নওয়ান সিগারেট এ দীর্ঘ টান দিয়ে নাক মুখ দ্বারা ধোঁয়া ওড়ায়৷ রোদ চশমা খুলে টিশার্টে ঝুলিয়ে রাখে। তারপর ডান হাত দ্বারা চাপ দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে জবাব দেয়

” নাথিং

তামিম এদের রিকশা ডেকে দে।

তামিম নামের ছেলেটা চটজলদি মাথা নারিয়ে এক খানা রিকশাওয়ালা ধরে আনে। নেহাল নওয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেই রিকশায় উঠতে নিলে নুপুর বাঁধা দেয়। তাদের উপেক্ষা করে নেহাল এর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ভিড় ঠেলে।

বল্টু বিরক্ত হয়। এই আফা খালি ভাইরে ইগনোর করে।

তামিম বলে

“ভাই উনি তো

হাত উঁচু করে তামিমকে থামায় নেওয়ান। হাতের সিগারেট মুখে পুরে বিরবির করে বলে ওঠে

” এই শালির এটিটিউটই তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।

যে ছেলেগুলো এতোক্ষণ নুপুরকে কথা শোনাচ্ছিলো। বাজে মন্তব্য করেছিলো তারা এগিয়ে আসে। ভাই ভাই করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।

নিতিন নামের ছেলেটা এবার অনার্সে ভর্তি হয়েছে। একটু উগ্র টাইপের। সেই মূলত নুপুরকে বাজে কথা বলেছে।

নওয়ান সব গুলো ছেলের পানে নজর বুলিয়ে শান্ত স্বরে বলে ওঠে

“আমার পার্সোনাল ইঁদুরকে বাজে কথা কে বলেছে?

সকলের মুখের হাসি গায়েব।

নিতিন নামের ছেলেটি থর থর করে কেঁপে ওঠে। কেনোনা নওয়ান রিশাদ মুসতালিন তার সমুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ঠোঁটের ভাজে সিগারেট তবে নিত্যদিনের মধ্যে তার চোখ মুখ স্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে তাকে। যেনো এক্ষুনি এই ছেলেটাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে।

নিতিন কোনো কিছু না ভেবে নওয়ানের পা জড়িয়ে ধরে। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে

” ভাই মাফ করে দিন। আমি বুঝতে পারি নি আপনি ম্যামকে ভালোবাসেন। আমি তো ভেবেছিলাম

বাকিটা শেষ করার আগেই নওয়ান ছেলেটাকে লাথি মারে। ছিঁটকে ফলের দোকানের সামনে গিয়ে পড়ে ছেলেটা। নওয়ান তামিমের পানে তাকায়। ব্যাসস তামিম বুঝে যায় তাকে কি করতে হবে।

___

টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী নায়েব তালুকদার একজন সন্ত্রাসী, কালোবাজারী এবং নারী পাচারকারী। মোটামুটি বাংলাদেশের জনগণ ক্ষেপে গেছে। সকলেই নায়েক তালুকদারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াচ্ছে। নিউজ থেকে জানা গেলো কাল-পরশু জনগণ আন্দোলনে নামবে।যতক্ষণ পর্যন্ত নায়েব তালুকদার কে শিক্ষামন্ত্রী থেকে বহিষ্কার করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলতে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী পদে ভোটে দাঁড়ানোর নমিনেশন বাতিল হওয়ার পথে। এবারে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে নায়েব তালুকদার অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

শিবলায় উপজেলা চেয়ারম্যানের একটা ভুলে নায়েব তালুকদারের গোটা ক্যারিয়ার ধ্বংসের পথে।

এমন নিউজ দেখে মোটেও বিচলিত হয় না নায়েব তালুকদার। বরং ঠোঁটের কোলে মৃদু হাসি বজায় রেখে মনোযোগ সহকারে নিউজ দেখতে থাকে। নওয়ান বাবার পাশে বসে সিগারেট টানছে।

২৭ বছর জীবনে প্ল্যান করে কখনো কিছু করেনি নওয়ান। মনে হয়েছে করে ফেলেছে। তবে এবার প্ল্যানিং করেছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে ভেবে চলেছে দুই দিন যাবত। সিগারেট এর ধোঁয়া তার মস্তিষ্ককে বশ করতে পারছে না। মনের মধ্যে একটা কথা বারবার নাড়া দিচ্ছে “আমি যেটা করছি ঠিক হচ্ছে তো?”

হঠাৎ করে নায়েব তালুকদার বলে ওঠে

“আব্বু জীবনে বাঁচতে হলে বাঘের মত বাঁচো। গোটা দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় নিয়ে বাঁচো। শাসন এবং শোষণের থেকে বড় শান্তি আর কিছুতেই নেই। তোমার টাকা আছে পাওয়ার আছে না ক্ষমতা আছে ব্যাস গোটা দুনিয়া তোমার পায়ের তলায়।

বাবার কথা শুনে নওয়ান দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে ফেলে। এই দৃশ্য খানা নায়েব তালুকদারের ভীষণ ভালো লাগে তার রাজপুত্র যখন দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকায় তখন তাকে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। মাঝেমধ্যে তিনি খুব গর্ববোধ করেন। কারণ তার এমন রাজপুত্রের মত একটা সন্তান আছে। যার মুখের দিকে তাকালে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়।

হঠাৎ করে প্রচন্ড জোরে একটা শব্দ হয়। নওয়ান তার হাতের কাছে থাকা ফুলদানিটা ছুঁড়ে মেরেছে টিভির পানে। টিভি এবং ফুলদানি দুটোই ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছে। নায়েব তালুকদার চমকেছে। আমিনা বেগম নিজ কক্ষ থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। স্নেহাও চলে এসেছে। বাকিরা কেউ বাসায় নেই।

বিচলিত স্নেহা নওয়ার পাশে দাঁড়িয়ে উদগ্রিন্ন স্বরে বলে

” আপনি ঠিক আছেন?

নওয়ানের বিরক্তি যেনো বেড়ে গেলো। স্নেহার গালে স্ব জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে চিৎকার করে বলে

“শালী তোকে মেরে পুতে দিবো। রাজনীতি করবি? আব্বুকে বুদ্ধি দিস?

বলতে বলতে স্নেহার চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে। ব্যাথায় গুঙিয়ে ওঠে স্নেহা।

আমিনা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে

” ওর কোনো দোষ নাই আব্বা। ও কিছু করে নাই।

নওয়ান বোধহয় একটু শান্ত হলো। ছেড়ে দেয় স্নেহার চুল। সিগারেট খানা কোথায় জানি পড়ে গিয়েছে। মাথা নিচু করে হন্যে হয়ে সিগারেট খুঁজে। সোফার কোণায় পড়ে আছে। নিচু হয়ে সিগারেট তুলে ঠোঁটের ভাজে গুঁজে নেয়।

এবং গম্ভীর স্বরে বলে

“বদনাম রটে গেলে সেটাকে ঢাকা যায় না। আমাদের উচিত বদনামকে সত্যি করা।

মিডিয়া দেখাচ্ছে না নায়েক তালুকদার নারী পাচারকারী? আমাদের এবার এই ব্যবসাটা শুরু করা উচিত।

আর স্নেহা রাজনীতির বিষয়ে তুই যদি আর একটা কথা বলিস তাহলে তোকে দিয়েই নারী পাচারের বিজনেস শুরু করবো। মাইন্ড ইট

কথা শেষ করে বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় নওয়ান। নায়েব

__

নাসিরের বাড়িটা আজকে খুশির আমেজে সেজে উঠেছে। ছেলে মেয়ে স্ত্রী এবং বাবা সবাই মিলে একসাথে গল্প করছে। এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। সোনিয়া বেগম ব্যস্ত থাকেন। নাসির নিজেও কাজে ব্যস্ত থাকে। ছেলে তো বাসায়ই থাকে না। সব মিলিয়ে তাদের সুন্দর সময় কাটানো হয় না কখনোই। বোধ হয় পাঁচ বছর পরে আজকে এমন একটা দিনে সম্মুখীন হল।

সোনিয়া চিন্তিত সরে নাসির কে বলে

“ঝামেলায় জড়ানোর কি খুব দরকার ছিলো?

নাসির নুপুরের মাথায় বিল কাটতে কাটতে জবাব দেয়

“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনের সমান অপরাধী। জীবনে বাঁচতে হলে সৎ পথে মাথা উঁচু করে বাঁচো। অন্যায় দেখলেই রুখে দাঁড়াতে হবে। আমি যদি সেদিন মুখ না খুলতাম তাহলে নায়েব তালুকদার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতো। একজন খারাপ মানুষ কি করে একটা দেশে দায়িত্ব নেবে? কিভাবে সে জনগণকে ভালো রাখবে? তার নিজের মনেই তো পবিত্রতা নেই। দেশটা কি করে পবিত্র করবে?

নেহাল বলে

“বাবা এটার জন্য ওরা তোমাকে ছেড়ে দেবে না।

“হ্যাঁ জানি আমি। হয়তো মেরে ফেলবে। নয়তো মিথ্যা কেচে ফাসিয়ে দেবে। তবে আমি ভয় পাই না। আমার দেশের মানুষদের জন্য আমি ভালো কাজ করেছি। এর পরিণাম যদি মৃ/ত্যু হয় তাহলে আমি হাসিমুখে মৃ/ত্যুকে গ্রহণ করে নিতে রাজি।

নুপুর বলে

“কিন্তু বাবা শেষ পর্যন্ত যদি নায়েব তালুকদার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যায় তাহলে?

নুপুরের কথাটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলিং বেল বেজে ওঠে। চমকে উঠে সকলেই। এ সময় তো বাড়িতে কারো আসার কথা নয়। আজকে কলেজ বন্ধ প্রাইভেটে বন্ধ দিয়েছে সোনিয়া। তাহলে কে আসলো?

নেহাল উঠে পড়ে। দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলে

“আমি দেখছি কে এসেছে

বলেই দরজা খুলে দেয়। দেখতে পায় নওয়ান রিশাদ মুসতালিন দাঁড়িয়ে আছে। তার সঙ্গে চেলাপেলাও রয়েছে কিছু। সব থেকে অবাক করা বিষয় একটা হুজুরকে কাঁধে করে আনা হয়েছে।

নেহাল ভ্রু কুচকে বলে

” আপনারা এখানে? কিছু চাই?

নওয়ান দাঁত দিয়ক সিগারেট কামড়ে ধরে একটু হাসে। তারপর নেহাল এর কাঁধ বরাবর ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

নাসির সোনিয়া নুপুর দাঁড়িয়ে পড়ে।

তাদের কিছু বলার সময় না দিয়ে নওয়ান এর চেলাপেলারা সবাইকে ধরে ফেলে। পরপরই হাত মুখ বেধে ফেলে।

নুপুর নওয়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে

“এই জানোয়ার আমার বাবা মায়ের হাত পা বাঁধছে কেনো? ছেড়ে দিতে বলুন ওদের।

নওয়ান সোফায় বসে পড়ে আয়েশ করে।

নুপুরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত নজর বুলিয়ে বলে ওঠে

“ওই হুজুর বিয়ে পড়ানো শুরু কর।

চলবে….

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply