Golpo romantic golpo অন্তরালে আগুন

অন্তরালে আগুন পর্ব ২৩


#অন্তরালে_আগুন

#পর্ব:২৩

#তানিশা সুলতানা

“আপু তুমি কিছুতেই বিয়ে করবে না। সবাইকে বলে দাও এটা।

নুপুরের কথা স্নেহা শুনলো কিনা বোঝা গেল না। তার দৃষ্টি নুপুরের কপালে থাকা ক্ষত স্থানে। ললাটে ভাজ পড়েছে কয়েকটা।

চিন্তিত স্বরে বলে

“কপালে আঘাত পেলে কি করে?

“সেসব ছাড়ো। আমি কি বলছি সেটা শোনো। দেখো আপু আমি এই বাড়িতে বেশি দিন থাকবো না। ওই বেয়াদবটার সাথে সংসারও করবো না। আমি চলে যাওয়ার পরে তুমি তাকে বিয়ে করিও। সুন্দর একটা সংসার হবে তোমাদের।

কথাগুলো বলতে গিয়ে কয়েকবার গলা কেঁপে উঠেছে নুপুরের। সেটা বেশ অনুভব করলো স্নেহা। সে মুচকি হেসে বিছানা ছেড়ে নামে। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইচ বক্স নিয়ে আবারো নূপুরের পাশে গিয়ে বসে।

তুলোতে একটুখানি ওষুধ লাগিয়ে সেটা দিয়ে নুপুরের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে করতে বলে

“বলতেই তোমার গলা কেঁপে উঠছে। তার পাশে আমাকে সহ্য করতে পারবে? পারবে না। সবাইকে আল্লাহ স্নেহার মতো সহ্য শক্তি দেয় নি।।

বিয়ে খুব ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু এর বিশালতা গভীর। বিয়ে এমন একটা বন্ধন যে বন্ধন ছেড়ে কোনদিনও বেরিয়ে আসা যায় না।

তুমিও কোনদিন নওয়ানকে ছাড়তে পারবে না।

আর আমিও কখনো আশা করি না তাকে পাওয়ার।

ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ দ্বারা নুপুরের ক্ষতস্থান ঢেকে দেয় স্নেহা। তারপর মেয়েটা দু গালে হাত রেখে বড্ড মায়া ভরা কন্ঠস্বর বলে

“ওনাকে মেনে নাও নুপুর। সে তোমাকে বড্ড ভালোবাসে। দুজনে দুরে কোথাও চলে যাও। নাইবা থাকলো বিলাসিতা খুব সাধারন ভাবে বাঁচো।

নুপুর স্নেহার হাতের উপর হাত রাখে

“আমি সংসার করতে আসিনি আপু। তোমাদের এই পরিবারটাকে ধ্বংস করতে এসেছি। নওয়ান কেও ছাড় দেবো না। তবে তুমি যদি তাকে চাও ভেবে দেখতে পারি।

“বোকার স্বর্গে বসবাস করছো তুমি। রাজনীতির খেলা বুঝবে না। আর আমার চাচ্চু একদমই সুবিধার মানুষ নয়। ক্ষমতার জন্য সে যা খুশি করতে পারে। আমার সাজেশন থাকবে তুমি এসব মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলো। আর ওই মানুষটাকে আঁকড়ে ধরো।

বলতে বলতে স্নেহার চোখের কোণে পানি চলে আসে।।

” তুমি যাকে অবহেলা করছো তাকে আমি আল্লাহর কাছে চেয়েও পাই নি।

তুমি যাকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছো আমি তাকে আঁকড়ে ধরার জন্য পাগলের মতো লড়াই করে গেছি।

মানুষ ঠিকই বলে। সহজে পেয়ে গেলে মূল্যহীন মনে হয়।

নুপুর তুমি যেদিন সত্যিই নওয়ানকে হারিয়ে ফেলবে সেইদিন বুঝবে সে ছাড়া তোমাকে ভালোবাসার মতো কেউ নেই।

নুপুর মানতে পারলো না। তাকে ভালোবাসার মতো তার ভাইয়া বাবা মা সবাই রয়েছে। নওয়ানের ভালোবাসার দরকার নেই তার।।

____

“নওয়ান তালুকদারের একমাত্র দুর্বলতা তার বাবা। গোটা দুনিয়ায় একটা মানুষ ছাড়া নওয়ান কে বশ করার ক্ষমতার কারণ নেই। এই নায়েব তালুকদার চাইলে নওয়ানকে দিয়ে যা খুশি করিয়ে নিতে পারবে। নির্বাচনে আমরাই জিতবো। বীণা ভোটে জয়ী হবে আমাদের দল।

নায়েব তালুকদার বড্ড গর্ব করে কথাগুলো বলেন রাষ্ট্রপতি জাফর ইকবালকে। নির্বাচন উপলক্ষে দুজন একত্রিত হয়েছেন। পার্সোনাল মিটিং চলছে দুজনের মধ্যে। গার্ড পুলিশ সহ সাংবাদিকরা অফিসের বাইরে ভিড় জমিয়েছে।

“নিউজ দেখলাম আপনার ছেলে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে এসেছে। আমার মনে হচ্ছে ছেলেকে আর বেশি দিন নিজের কব্জায় রাখতে পারবেন না।

নায়েব তালুকদার গভীর ভাবনায় বিভোর হয়। আসলেই তো তার ছেলেটা দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে। নুপুর নামক মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিন্তু এমনটা তো হতে দেওয়া যায় না। রাজনৈতিক মানুষদের কোনো দুর্বলতা থাকতে নেই। তাদের একটা উদ্দেশ্য আর সেটা হচ্ছে নিজের পজিশন সারা জীবন ধরে রাখা। নিজের দেশের রাজা হিসেবে জীবন অতিবাহিত করা। সব মানুষদের কন্ট্রোল করা। ব্যাস এটুকুই।

কোন নারীর প্রতি দুর্বল থাকা অবশ্যই পুরুষত্বের পরিচয় নয়। তবে কি নওয়ান কাপুরুষ হয়ে যাবে?

নায়েব তালুকদার এটা কখনোই হতে দেবে না।

এবার সময় এসেছে নুপুর নামক মেয়েটির একটা ব্যবস্থা করার।

নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। প্রয়োজনে এমপির পরিবারের মত নুপুর শিকদারের পরিবারকেও ধ্বংস করে দেবে নায়েব।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জাফর ইকবাল বলে ওঠে

“আপনার তৈরি করা পতিতালয় ভালো লাভজনক বিজনেস। সীমার কথা মনে আছে? আমার বক্তব্য হচ্ছে

আপনার পুত্রবধূকে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। পাক্কা খবর রয়েছে আমার কাছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে অভি আপনার পুত্রবধ প্রেমে পড়ে গেছে। সে এখন মানিকগঞ্জ আসছে। কোনভাবে যদি আপনার পুত্রবধূর সঙ্গে অভির দেখা হয়ে যায় আর সে যদি সব অভিকে জানায় তাহলে কিন্তু আমরা কেউই টিকতে পারবো না।

আমাদের পজিশন মন্ত্রীত্ব সবটা ধুলোয় মিশে যাবে।।

__

নওয়ান তালুকদার যখন বাসায় ফিরেছে তখন সূর্য মাথার উপর অবস্থান করছে। কাঠফাটা রোদ্দুরে প্রকৃতি খা খা করছে। বল্টু গেইটের বাইরে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো যতক্ষণ নওয়ানকে দেখা গিয়েছে। যখনই সে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েছে আর মেইন দরজা বন্ধ হয়েছে তখনই বল্টু নিজ বাড়িড উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছল।

প্রচন্ড গরমে পশু পাখি থেকে শুরু করে মানুষজন সকলেরই নাজেহাল অবস্থা।

কিছু মুহূর্ত পরেই মেহমান চলে আসবে। নুপুরকে আজকে কলেজে যেতে দেওয়া হয়নি। মূলত বাসা থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। অথচ তার বেরোনো দরকার ছিল। আনুকে খুঁজে বের করা অতীব জরুরী। তবে নুপুর বসে নেই। নিরবকে পাঠিয়েছে। তাছাড়া শাফিন তো রয়েছেই। সে পাগলের মত হন্য হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে মেয়েটাকে। কিন্তু কোন খোঁজ পাচ্ছে না। একটা ক্লু পাচ্ছে না।

এই মুহূর্তে খাবার টেবিল সাজাচ্ছে নুপুর। স্নেহা হাতে হাতে সাহায্য করছে।

তখনই নওয়ান এসে সোফায় বসে পড়ে। বড্ড ক্লান্ত যেনো সে। ঘামে ভিজে কালো রঙের শর্ট খানা গায়ের সঙ্গে লেপ্টে গিয়েছে। ফর্সা মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে। বরাবরের মতোই ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট রয়েছেই৷ নুপুর এক পলক নওয়ানের পানে তাকায়। পরপরই নজর ফিরিয়ে নেয়।

স্নেহা ইতিমধ্যেই লেবুর শরবত বানিয়ে ফেলেছে। আমিনা বেগম তাড়াহুড়ো করে নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। স্নেহার থেকে শরবতে গ্লাস নিয়ে ছেলের পাশে গিয়ে বসে।

গ্লাস খানা হাতে ধরিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করে

“সারারাত কোথায় ছিলে? বাসায় কেনো ফিরলে না? কতবার কল করেছি আমি?

কলটা রিসিভ করে জানিয়ে দেওয়া যেতো না যে আজকে তুমি বাসায় ফিরবে না? মায়ের বুঝি চিন্তা হয় না?

ঠোঁটের ফাঁকা থেকে সিগারেট বের করে অজানা উদ্দেশ্যে ছুড়ে মারে নওয়ান। তারপর এক চুমুকে গোটা শরবত টুকু খেয়ে নেয়। টি টেবিলের উপর গ্লাস রেখে মায়ের কোলে মাথা রেখে সোফায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে।

কপালে বুঝি একটু টান পরলো? শক্তপোক্ত নওয়ান চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। বেশ ব্যথা পেয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। নুপুরের বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। লোকটার কপালের ক্ষতটা যেনো একটু বেশি। সে নিজ কক্ষের দিকে অগ্রসর হতে নেয় ফার্স্ট এইচ বক্স আনবে বলে। কিন্তু তার আগেই খেয়াল করে স্নেহা হাতে বক্স নিয়ে এগিয়ে আসছে।

থেমে যায় নুপুর। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।

স্নেহা নওয়ানের সামনে ফ্লোরে বসে পড়ে। বক্স খুলে ঔষধ বের করতে করতে বলে

“বড়মা তোমার ছেলেকে বলে দিও অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘোরাঘুরি করলেই বড়সড়ো নেতার পদবী পাওয়া যাবে না।

নওয়ান কপাল কুঁচকে বলে

“পদবী অলরেডি পেয়ে গেছি। নওয়ান তালুকদারের থেকে বড় নেতা এই বাংলাদেশে আছে নাকি দুটো?

আমিনা একটু হাসে। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বলে

“থাকবে কিভাবে? এই দেশের একমাত্র রাজার একমাত্র রাজপুত্র তুমি। তোমার থেকে বড় নেতা জন্ম নেওয়ার আগেই তো তাকে

বাকিটা শেষ করে না আমিনা। নওয়ানও মাকে ঘাটায় না। সে কি বলতে চেয়েছিলো ও সেটা বুঝে ফেলে।

স্নেহা নওয়ানের ক্ষত স্থানে ঔষধ লাগাতে যেতেই নওয়ান বলে ওঠে

“বাড়িতে গেস্ট আসবে আজকে। তোকে বিয়ে দিয়ে দিবো। কোনো সিনক্রিয়েট করবি না।

স্নেহা মায়াভরা দৃষ্টিতে নওয়ানের মুখ পানে তাকিয়ে বলে

“আমি কি আপনাকে খুব বিরক্ত করি? করিনা তো বলুন। তাহলে কেনো আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন?

আমিনা বুঝে যায় এখনই স্নেহা একটা ধমক খাবে। তার বাজানের মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার জন্যই একটা কথা যথেষ্ট ছিলো।

হলেও তাই। নওয়ান নিজের কপালে থাকা স্নেহার হাতটা ঝাঁড়া মেরে সরিয়ে দেয়।।তারপর শক্ত গলায় বলে

“আমি বলেছি সিনক্রিয়েট করবি না মানে করবি না। যদি কিছু উল্টাপাল্টা করিস জানে মে/রে দেবো তোকে। জানোয়ার একটা

কথা শেষ করে সোফা থেকে উঠে পড়ে। বড় বড় পা ফেলে নিজ কক্ষের দিকে চলে যায়। স্নেহা শব্দ করে কেঁদে ওঠে।

আমিনার হাত ধরে বলে

“উনি আমায় ভালোবাসলো না কেনো বড়মা? উনাকে অন্য কারো সাথে আমি সহ্য করে নিতে পারছি। কিন্তু আমাকে অন্য কারো সাথে আমি সহ্য করতে পারবো না। আমি ম/রে যাবো বড় মা। এক্কেবারে ম/রে যাব আমি।

আমিনার শান্তনা দেয়ার মত ভাষা নেই। সে শুধু স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

সবকিছুর সাক্ষী থাকে নুপুর। নিজের উপর নিজের ভীষণ রাগ হয়। কেনো সে সেদিন নওয়ান তালুকদারের সামনে এসেছিলো? কেনো আবির আর আনুর হয়ে এই লোকটার সাথে ঝামেলা করতে গিয়েছিলো? কেনই বা সেদিন বিয়েটা করলো? নুপুর না থাকলে নওয়ান ঠিকই স্নেহাকে ভালোবাসতো বা বিয়ে করতো।

বুক চিরে দীর্ঘ শেষ বেরিয়ে আসে ওর। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুকণা হাতের উল্টো পিঠে মুছতে মুছতে চলে যায় সেখান থেকে।

___

শার্ট খুলে বিছানায় শুয়ে আছে নওয়ান। হাতে থাকা ব্যান্ডেজ র*ক্তে ভিজে লাল হয়ে আছে। ধবধবে ফর্সা শরীরেও ঝোপ ঝোপ আঘাতের চিহ্ন। এসি চলছে ফুল পাওয়ারে। তারপর আবার ফ্যান চালিয়েছে। খালি গলায় গুনগুনিয়ে গাইছে

” তোর মুখের মায়ায় পইড়া দেখি

বুকটা খালি লাগে

বড়ই খালি খালি লাগে

কেনো জানি তোরে শুধু আমার আমার লাগে।।

নুপুর বুকে হাত গুঁজে নওয়ানের সামনে দাঁড়ায়। নওয়ানের গান থেমে যায়।

“আনু কোথায়?

নওয়ান কিছু মুহূর্ত নুপুরের মুখপানে তাকিয়ে থাকে। ঘুমে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গিয়েছে। ঠোঁট দুটো শুকিয়ে গিয়েছে। চামড়া উঠে যাচ্ছে। ফর্সা গালি বোধহয় দুটো মশা কামড়িয়েছে। লাল হয়ে আসে। অদ্ভুত দেখাচ্ছে তাকে।

“তুমি খুব সুন্দর চাঁদ। তোমার দিকে তাকালে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। আমার দৃষ্টি ফেরে না, মন ভরে না। কলিজা ঠান্ডা হয় না। কিছু মুহুর্ত তাকিয়ে থাকহ তোমার দিকে? নয়ন ভরে একটু দেখি?

অদ্ভুত সুন্দর এক আবদার।।নুপুর শুকনো ঢোক গিলে। ইচ্ছে করে লোকটাকে বলতে ” যা যা বললেন আবার বলুন না প্লিজজ। শুনতে বেশ ভালো লাগছে”

কিন্তু সেটা বলতে পারে না নুপুর।

নওয়ান নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে বলে

“আমার হবে চাঁদ?

গোটা দুনিয়ায় সিগারেট আর রাজনীতি ছাড়া আমার আর কোনো বাজে স্বভাব নেই।

কথা গুলো এতোটাই ধীরে বলে যে নুপুর শুনতে পায় না ঠিকঠাক। তাই কান এগিয়ে বলে

” কি বললেন শুনতে পাই নি। আবার বলুন।।

“এখন ঘুমাবো আমি। দুই ঘন্টা পরে তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে দিয়ে আসবো। রেডি থেকো।।

নুপুর বেশ অবাক হয়। নওয়ান তাকে বাড়ি দিয়ে আসবে? কিন্তু কেনো?

চলবে

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply